Home e-Learning কনটেন্ট রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান? এই ৫টি সিক্রেট বিষয় জেনে রাখুন

কনটেন্ট রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান? এই ৫টি সিক্রেট বিষয় জেনে রাখুন

53
4
content-writer

আপনি কি একজন কনটেন্ট রাইটার হতে চান? ঘরে বসে কনটেন্ট রাইটিং করে লাখ টাকা আয় করতে চান? তবে অনেকে কনটেন্ট রাইটিং ও কপিরাইটিং দুটো মিশিয়ে ফেলেন। দুটো কিন্তু এক নয়।

কনটেন্ট রাইটিং ও কপিরাইট-এর পার্থক্য কী?

কনটেন্ট রাইটিং ও কপিরাইট লেখালেখির একটি অংশ। তবে, কপিরাইট মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। একজন কপিরাইটারের কাজ হল বিজ্ঞাপন এবং বিপণন সামগ্রীর জন্য আকর্ষণীয়, স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত কিছু লেখা। তারা ওয়েব এবং গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাতে তাদের বার্তা স্পষ্ট হয়ে ইমেইলের ইনবক্সে বা ওয়েবসাইট ল্যান্ডিং পৃষ্ঠায় প্রদর্শিত হয়।

মূলত ডিজিটাল মার্কেটিংকে আরও সৃজনশীল দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে ও যেকোনো ব্র্যান্ড দর্শকদের কাছে আরও আকর্ষণ বাড়াতে পারে কপিরাইটিং এর মাধ্যমে । বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এই যুগে পণ্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে ও ব্র্যান্ডের প্রচারের স্বার্থে কপিরাইটারদের প্রয়োজন হয়।  আপনার যদি লেখার প্রতিভা থাকে এবং আকর্ষণীয় ভাবে কোনো বিষয়বস্তু লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার প্রতিভা থাকে এবং আপনি যদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করেন, তাহলে একজন কপিরাইটার হওয়া আপনার ক্যারিয়ারের আদর্শ মাধ্যম হতে পারে।  

বর্তমানে কনটেন্ট রাইটিং অনেক মানুষের জন্য একটি স্বপ্নের কাজ। কেউ কেউ সংবাদপত্রের বিষয়বস্তু বা নিবন্ধ লেখেন। এগুলো কনটেন্ট রাইটিং এর অন্তর্গত। এই ডিজিটাল যুগে, যেখানে অনলাইনে অসংখ্য বিষয়বস্তুর ওয়েবসাইট রয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র আপনার মনে যা আছে তা লেখাই যথেষ্ট নয়। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সঠিক উপায় অনুসরণ করে আপনার ব্যতিক্রমী প্রতিভা যুক্ত করে আপনার লেখাকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। 

কনটেন্ট রাইটার কারা

কনটেন্ট রাইটার হলেন এমন একজন সৃজনশীল ব্যক্তি যিনি ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন পত্রিকা, ইবুক, পণ্যের বিবরণ এবং অন্যান্য অনেক প্ল্যাটফর্মের জন্য মানসম্পন্ন  প্রাসঙ্গিক অনুলিপি লিখতে বিশেষজ্ঞ।

প্রতিটি ওয়েবসাইটে একটি সুনির্দিষ্ট পাঠক  রয়েছে। কনটেন্ট রাইটার এই পাঠকদের জন্য তার লেখা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

কনটেন্ট রাইটিং কি?

কনটেন্ট রাইটিং হল সুনির্দিষ্ট পাঠকের কাছে একটি বার্তা পৌছে দেওয়া। সেটি হতে পারে কোনো বস্তু সম্পর্কে, অথবা কোনো বিষয় যা পাঠকদের জানার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে।  সহজ কথায় কনটেন্ট রাইটার হিসেবে আপনি ব্লগ পোস্ট এবং ওয়েব পেজে লিখবেন, সামাজিক মিডিয়া পোস্ট এবং ইমেল মার্কেটিং তৈরি করবেন, এবং এমনকি প্রেস রিলিজ এবং ভিডিও বা অডিও স্ক্রিপ্টগুলিতে কাজ করবেন। এটি একটি বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্র যা ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রকে স্পর্শ করে।

এখন, আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে একজন কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেনঃ

কীভাবে একজন কনটেন্ট রাইটার হবেন?

  • কনটেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-

লেখার দক্ষতা :

আপনি যে ভাষা ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে আপনার সর্বাধিক জ্ঞান থাকা উচিত এবং ভুলের কোন সুযোগ থাকা উচিত নয়। আপনাকে ব্যাকরণের বুনিয়াদিতে দক্ষ হতে হবে, কনটেন্ট লেখা শুরু করার আগে এসব বিষয়ে দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করুন।

লেখা বিষয় নির্বাচন করুন:

আপনি কি জানতে এবং লিখতে চান তা জানুন।  আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রগুলি খুঁজুন, এমন কিছু যা আপনাকে কৌতূহলী রাখে। আপনি যদি রান্নার কাজে পারদর্শী হন তবে সেটি নিয়ে লেখা শুরু করুন। এক কথায় আপনি সহজে আকর্ষণীয় ভাবে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন এমন বিষয় খুঁজুন।

কিভাবে কনটেন্ট রাইটিং শুরু করবেন?

বেশি বেশি পড়বেন আর লিখবেন। যা পড়লেন তা থেকে আপনি কি বুঝলেন সে বিষয়ে লেখবেন। সারাদিন কি কি করলেন তার ডায়েরি করবেন। এতে আপনার লেখার দক্ষতা বাড়বে। আপনি ব্লগ পোস্ট, সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট, বা বই লিখা শুরু করুন। আপনার যা ভালো লাগে সেই বিষয় নিয়ে লিখুন। একটি মুভি বা নাটক থেকে কী শিখলেন তা লিখবেন। লেখার কোনো শেষ নাই।

 নিম্নলিখিত টিপস গুলো আপনাকে উন্নত ভাবে লেখা লিখতে সাহায্য করবে।

প্রথমতঃ কনটেন্ট রাইটিং-এর জন্য গবেষণা

আপনাকে নতুন কনটেন্ট লেখার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে হবে, এবং এই জন্য আপনাকে প্রায়শই রিসার্চ জোনে প্রবেশ করতে হবে। আপনি যে ধারণাটি সম্পর্কে লিখতে যাচ্ছেন তা খুঁজে পাওয়ার সাথে সাথে আরও গবেষণা করুন। এই বিষয়ে নোটপ্যাডকে আপনার সেরা সঙ্গী করুন এবং আপনার ধারণা সম্পর্কে মূল পয়েন্টার লিখতে থাকুন।  আপনার কাছে সবসময় রেফারেন্স পৃষ্ঠা থাকবে কিন্তু আপনি কীভাবে একটি বিষয়বস্তুর অংশ নিয়ে এগিয়ে যাবেন তার চিন্তাভাবনাগুলি লিখতে থাকুন।

দ্বিতীয়তঃ একজন কন্টেন রাইটারের দক্ষতা

আপনি যখন কনটেন্ট লেখা শুরু করবেন তা অন্য সবার মত হবে না। কিছুটা আলাদা হবে। আর এটাই আপনার নতুনত্ব। আপনার কাজের সময়কালে, আপনি অনেক লেখকের মুখোমুখি হবেন যাদের একটি অনন্য প্রতিভা থাকতে পারে।

আপনি তাদের কাজ বা লেখার ধরণ দেখে তাদের থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন, তবে আপনাকে এই শৈলীটি অনুলিপি করা যাবে না।  যেহেতু প্রতিটি ব্যক্তি আলাদা এবং একটি অনন্য ব্যক্তিত্ব রয়েছে, তাই তাদের একটি বৈচিত্র্যময় লেখার শৈলী থাকা উচিত।

উদাহরণ হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবাল স্যারের লেখার ধরণ আলাদা আলাদা।  তাদের লেখার একটি অনন্য শৈলী রয়েছে এবং তারা এমনকি জটিল ধারণাগুলিকে সহজ মনে করতে পারেন।

তৃতীয়তঃ বিষয়বস্তু লেখার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি

আপনি একটি বিষয় নিয়ে লিখছেন, যা ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে রয়েছে, তাহলে আপনি কী পার্থক্য তৈরি করছেন?  এভাবে আপনি অনলাইনে কনটেন্ট লেখা শুরু করবেন না। আপনি আপনার  লেখা কনটেন্ট -এ একটা নতুনত্ব নিয়ে আসুন।

আপনার বিষয়বস্তুর অংশে একটি নতুন পরিবর্তন দেওয়া আপনার ব্লগকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে ৷  নির্ভরযোগ্য শ্রোতা অর্জনের জন্য সেই নতুনত্ব প্রয়োজন।

চতুর্থতঃ একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরী করা

একজন কনটেন্ট লেখকের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পাঠকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করা। যা দিয়ে পাঠকদের মনোযোগ সৃষ্টি করা যায়।

এই ভাবে চিন্তা করুন:

আপনি এলোমেলোভাবে আপনার ফেসবুক প্রোফাইল স্ক্রোল করছেন। একটি লেখা দেখতে পেলেন  যেটি “কীভাবে কন্টেন রাইটিং লেখা শুরু করবেন”।  তারপরে, আপনি অন্য একটি লেখা দেখতে পেলেন যেটিতে “এখনই কন্টেন রাইটিং শুরু করার জন্য ৭টি আশ্চর্যজনক টিপস “বা “কন্টেন রাইটিং ক্যারিয়ার গড়ে লাখ টাকা আয় করুন “।

উপরের তিনটি শিরোনাম তিন রকম, এখন পাঠকরা সিদ্ধান্ত নেবে কোন শিরোনামের আর্টিকেলটি তারা পড়বে।

পঞ্চমতঃ বিষয়বস্তুর বিস্তারিত প্রুফরিডিং

বিষয়বস্তু সুন্দরভাবে সম্পাদনা না করা হলে, আপনার দর্শকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।  ভুল আছে এমন কনটেন্ট কেউ পড়বে না।

  • এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন:

প্রুফরিডিং এর  প্রথম দিকে এমন বাক্যগুলিকে সরিয়ে দেওয়া এবং পরিবর্তন করা উচিত, যা বিষয়বস্তুর সাথে মেলে না।  

প্রুফরিডিং এর দ্বিতীয় রাউন্ডে বানান, ব্যাকরণগত, এবং বিরামচিহ্নের ত্রুটিগুলি অপসারণের উপর ফোকাস করা উচিত।

তৃতীয় রাউন্ডটি পড়ার জন্য।  সবশেষে, সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আপনার খসড়াটি দেখুন।

কিভাবে বাসায় বসে থেকেও কনটেন্ট রাইটিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন?

নিজের ব্লগিং দিয়ে শুরু করুন

নিজের ব্লগ লিখতে শুরু করুন।  ব্লগ শেখার জন্য এর বিকল্প নেই।  সার্চ ইঞ্জিনগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লগ খুজে বেরে করুন, সেখানে কি লেখা থাকে, কীভাবে লেখে, লোকেরা কী পড়তে পছন্দ করে তা আপনি জানতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে মেম্বার হয়ে অনেক ব্লগারের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারেন, যা আপনার লেখার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন

লেখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গেলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন।  বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো হল Fiverr, Upwork, Truelancer, Problogger, Worknhire সহ আরও অনেক মারকেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে আপনার প্রোফাইল সাবমিট করে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে টাকা আয় করতে পারেন ।

Quora এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখা শুরু করুন

একজন বিষয়বস্তু লেখক হিসেবে আপনি Quora-এ লেখা পাবলিশ করে আপনার সামাজিক মিডিয়া উপস্থিতি তৈরি করতে পারেন। Quora আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে সাহায্য করবে, সেইসাথে লোকেরা লেখক হিসাবে আপনাকে চিনতে শুরু করবে। 

বাড়িতে বসে কাজ  করুন

আপনার LinkedIn প্রোফাইল তৈরি করুন, এবং Facebook গ্রুপ এবং কন্টেন সম্পর্কিত গ্রুপ, সাইট গুলিতে যোগদান করুন। অনেকে আছেন যারা তাদের ব্যবসার প্রচারের জন্য রাইটার খুঁজছেন। এই ধরনের সুযোগগুলি খুঁজুন এবং ঘরে বসে আপনার কন্টেন রাইটার হওয়ার প্রোফাইল তৈরি করুন।

কনটেন্ট রাইটার হিসেবে মাসে কত টাকা আয় করা যায়:

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জগতে পারে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে মাসে কত টাকা আয় করা যায়। এক্ষেত্রে অন্য যেকোনো পেশার মতো, বিষয়বস্তু লেখকের বেতন বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এর মধ্যে অভিজ্ঞতা একটি অন্যতম বিষয়। যদি বাংলাদেশের কথা বলেন, তাহলে নতুন হিসেবে একজন বিষয়বস্তু লেখকের বেতন ১৫০০০ – ২০০০০ হতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যত পারবে, বেতনও বাড়বে। আবার কেও মাসিক বেতন ছাড়াও ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও আপনি বিশ্বের যে কোন দেশের কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যদি ভালো লিখতে পারেন তাহলে মাসে ২ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত যায় করতে পারেন।

উপরের লেখাটা যদি ভালভাবে পড়েন, তাহলে আপনি নিজেই চিন্তা করুন এই পেশায় আসবেন কিন। একটি উদাহরণ শেয়ার করি। লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বুয়েট থেকে পাশ করে বিসিএস দিয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। তবে সেখানে অল্প কিছুদিন চাকরি করে আবার লেখালেখির জগত সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। এরপর লেখালেখিতে সময় দিতে থাকেন।

কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কোথায় কাজ করবেন ? 

কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করা সেরা ৫ ওয়েবসাইট। এই ৫টি মার্কেটপেলসে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

১. ফাইভার
২. আপওয়ার্ক
৩. পিপল পার আওয়ার
৪. ফ্রিল্যান্সার ডট কম
৫. গুরু

তাই আপনার যদি লেখা লেখি করতে ভালো লাগে, তবে আজই শুরু করুন আপনার কন্টেন রাইটার হওয়ার পথচলা। লেখালেখি করতে করতে আপনি এক সময় এই পেশার অংশ হয়ে যাবেন।

Previous articleমোবাইল দিয়ে টাকা আয় করার ৫টি সহজ উপায়
Next articleসিপিসি কী (CPC)? ওয়েবসাইটের জন্য কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ? কিভাবে এটা বাড়ানো যায় ?