যখনই Google Adsense নিয়ে কথা হয় তখনই সবার প্রথমে এই শব্দটায় উঠে আসে সিপিসি বা (CPC)। অনেকেই জানে না সিপিসি আসলে কি ? এটা কম হলে কি হবে আর বেশি হলে কি হবে? একটা Google Adsense বা গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আসলেই কি এটা অনেক বড় ভূমিকা রাখে?
এসব প্রশ্নের উত্তর এবং বিস্তিারিত আলোচনা থাকলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। শুরুতেই আমরা জেনে নিবো সিপিসি আসলে কী ?
সিপিসি বা (CPC) বলতে কী বোঝায় ?
CPC এর পূর্ণরূপ হলো Cost Per Click। অর্থাৎ আপনার কন্টেন্ট গুলো থেকে যে Add আসবে বা যেই কম্পানি আপনার কন্টেন্টে অ্যাড দেখাচ্ছে সেই কম্পানি গুলো প্রতিটা Add এর জন্য কত পরিমাণ Cost আপনাকে দিবে বা কত পরিমাণ Cost তারা বহন করবে সেটাই হলো সিপিসি বা Cost Per Click।
অর্থাৎ প্রতিটি অ্যাডে কত পরিমাণ টাকা বা ডলার আপনাকে Pay করবে সেটাই হলো সিপিসি। অর্থ্যৎ একটা অ্যাডস এ ক্লিক করলে যত টাকা আপনি পাবেন সেটাকেই মূলত সহজ ভাষায় সিপিসি বা Cost Per Click (CPC) বলে।
Website বা ওয়েবসাইটের জন্য কেন সিপিসি গুরুত্বপূর্ণ ?
ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি সিপিসির মাধ্যমে USD বা ডলার আমার অ্যাডসেন্সে পেয়ে থাকি। সুতরাং টাকা বা ডলার আয় করার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের জন্য সিপিসি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
সিপিসি ছাড়া আপনি কখনো ডলার বা টাকা Income করতে পারবেন না। মূলত সিপিসির সাথেই কিন্তু Income টা Related। কারণ আপনার সিপিসির পরিমাণটা যখন বেশি থাকবে তখন Income টাও বেশি হবে। আর যখন CPC এর পরিমাণ কম থাকবে তখন আয়টাও কম হবে। তাই আয়ের ক্ষেত্রে সিপিসিই হলো প্রধান।
ওয়েবসাইটের জন্য CPC বেশ কয়েকটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন;
দেশ এর ক্ষেত্রে সিপিসি ?
দেশের ক্ষেত্রে সিপিসি অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা ব্যবহারকারীর ভৌগোলিক অবস্থান হলো প্রথম কারণটি নির্ধারণ করে, যে বিজ্ঞাপনদাতা কীভাবে অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক। সাধারনত কানাডা, যুক্তরাষ্ট, অস্ট্রেলিয়া, ইত্যাদি দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ গুলোতে CPC কম থাকে।
কী-ওয়ার্ড এবং কন্টেটের ক্ষেত্রে CPC :
অনেক সময় সিপিসি কেমন হবে এটা আপনার আর্টিকেলের কীওয়ার্ডের উপর নির্ভর করে। সাধারনত বাংলা আর্টিকেল গুলোতে সিপিসি অনেক কম থাকে এবং ইংরেজি বা ইউনিক কীওয়ার্ডে সিপিসি তুলোনামূলক বেশি থাকে। এজন্য আমরা যখন কোনো কন্টেন্ট পোস্ট করবো তখন কীওয়ার্ড রিসার্স করে Post করবো।
সাইটের বয়সের ক্ষেত্রে সিপিসি:
আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে Website এর বয়সের সাথে সিপিসির একটা সম্পর্ক রয়েছে। যে ওয়েবসাইট গুলোর বয়স ২ থেকে ৩ বছর সেগুলো সিপিসি বেশি থাকে। আর নতুন ওয়েব সাইট গুলোতে সিপিসি অনেকটাই কম থাকে। সুতরাং সিপিসি সাইটের বয়সের উপরও নির্ভর করে।
উপরের এই তিনটি ক্ষেত্রেই CPC গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িত। এখন প্রশ্ন হলো নিজের ইচ্ছা মতো সিপিসি কি বাড়ানো সম্ভব ? চলুন এই বিষয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
নিজের ইচ্ছায় CPC বাড়ানো কি সম্ভব ?
এর উত্তরে আমি বলবো না। আপনি একটা কন্টেন্ট Post করলে এবং সেটাতে যদি সিপিসি বাড়াতে চান, তাহলে আমি মনে করুর যে, CPC বাড়বে না। ওয়েব সাইটে যেই অ্যাড গুলো সো করে সেটা Google Addon এর মাধ্যমে।
আর এটা কাজ করে Google Auction এর মাধ্যমে। Auction মানে হলো নিলাম। অর্থাৎ নিলামের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড Show করবে। এখানে লো সিপিসি এবং হাই সিপিসির অ্যাড সো করানো হবে।
এখন আপনি যদি লো সিপিসির Add অফ করে দিন তাহলে সেটার আর সো করবে না। কিন্তু আপনি তো জানেন না আপনার সাইটে হাই সিপিসির অ্যাড সো করবে।
মূলত অধিক CPC এর অ্যাড সো করে অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রর মতো দেশ গুলোতে। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট যদি হয় বাংলা তাহলে সিপিসি বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ বাংলা কনটেন্টগুলো অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলো চলে না।
সিপিসি বাড়ানোর উপায়:
আমরা সকলেই জানি যত বেশি ভিজিটর ইনকাম। কিন্তু আপনার সাইটে যদি সিপিসি Down থাকে তাহলে ইনকাম হবে না। নিচে CPC বাড়ানোর টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. SEO বা এসইও
এসইও মানে Search Engine Optimization বা সন্ধান যন্ত্র নিখুতকরন। যে পদ্ধতিতে Website বা ওয়েবপেজ কে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে দেখাবে, সেই পদ্ধতিকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলে।
সুতরাং আপনি যখন ওয়েব সাইটে কন্টেন্ট লিখবেন তখন এসইও করে পোস্ট করবেন। এসইও এর মাধ্যমেই আপনার পোস্ট গুগলের কাছে পৌছাবে এবং আপনার আট্রিকেলকে Rank করাবে।
এসইও সম্পর্কে যদি না জেনে থাকলে বা কিভাবে এসইও করে পোস্ট করতে হয় সেই সম্পর্কে কিছু না জানলে নিচের পয়েন্ট গুলো দেখতে পারেন। এছাড়াও গুগল বা YouTube এর সাহায্য নিতে পারেন।
(ক) Focus Keyword নির্বাচন করুন।
(খ) Banner বা ইমেজ তৈরি করুন।
(গ) Internal linking তৈরি করুন।
(ঘ) Outbound Backlink তৈরি করুন।
(ঙ) ফোকাস Keyword Meta Description অ্যাড করুন।
(চ) Tags এবং কপিরাইট লেখা লিখুন।
২. সঠিক নিশ নির্বাচন করা
সিপিসি বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো নিশ। অর্থাৎ আপনি কোন বিষয়ে ওয়েব সাইটটি তৈরি করবেন সেটি নির্ধারণ করুন। সাধারণত বেশিরভাগ সময় আমরা বাংলা কন্টেন্ট নিয়ে ওয়েব সাইট তৈরি করি। কিন্তু বাংলা কন্টেন্টের CPC কম থাকে।
এজন্য আপনি English ওয়েবসাইট সেই সাথে আপডেট নিশ যেমন: শিক্ষা, টেকনোলজি, রিভিউ ইত্যাদি ব্যবহার করে সাইট তৈরি করতে পারলে CPC বাড়ানো সম্ভব।
৩. লম্বা কী-ওয়ার্ডস ব্যবহার করা:
আমরা সকলেই জানি যে লম্বা কী-ওয়ার্ডস নিয়ে কাজ করলে যে কোনো ওয়েব সাইটকে Rank করানো যায়। ছোট Keyword এ আর্টিকেল র্যাংক করাতে সময় লাগে। আপনার সাইটের পোস্ট যদি গুগলে Rank না কলে তাহলে ভিজিটর আসবে কিভাবে। আর ভিজিটর না আসলে CPC বাড়বে না। সুতরাং লম্বা কী-ওয়ার্ডস ব্যাবহার করতে হবে।
৪. অধিক CPC কী-ওয়ার্ডস অপটিমাইজ করা:
একটা কন্টেন্ট লেখার পূর্বে সেই আর্টিকেলটিতে ভালোবেসে উচ্চ সিপিসি যুক্ত কী-ওয়ার্ডস নিয়ে ভালো করে অপটিমাইজ করে নিতে হবে। এমন Keyword নিয়ে কন্টেন্ট লেখার চেষ্টা করতে হবে যেগুলোতে এমনেতেই সিপিসি বেশি থাকে। এতে করে একটা সময় পর সিপিসি এমনেই অটোমেটিক বাড়বে।
৫. কোনো দেশকে টার্গেট করা:
সিপিসি বাড়ানোর গোপন একটি টিপস হলো কোনো দেশকে টার্গেট করে ওয়েব সাইট তৈরি করা। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে USD বেশি পাওয়া যায় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইত্যাদি দেশগুলো থেকে।
সুতরাং আপনি যদি এই দেশ গুলোকে টার্গেট করে কন্টেন্ট লিখেন তাহলে বা ওয়েব সাইট তৈরি করেন তাহলে সিপিসি অনেক বেশি হায় হবে।
৬. প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখানো:
আপনি আপনার Website এ প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনগুলো দেখানোর বিষয়টা নিশ্চিত করবেন। আপনার ওয়েবসাইট রিলেটেড অ্যাড গুলো আপনার ওয়েবসাইটের সেটাপ করলে দেখতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটে Google Adsense এর সিপিসি বেড়ে যাবে।
৭. ভাষা ব্যবহার করা:
ওয়েব সাইটের সিপিসি বাড়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো ভাষা বা Language নির্বাচান। বাংলা ভাষায় কখনোই সিপিসি অধিক হবে না। যদি হয় তাহলে সর্বোচ্চ 0.06 সেন্ড পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি English ভাষায় কন্টেন্ট বা সাইট তৈরি করেন তাহলে আপনার সিপিসি অটোমেটিক বাড়বে।
উপরের এই বিষয় গুলো উপর ভিত্তি করে আপনি যদি ওয়েব সাইট তৈরি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার সাইটে CPC আপনা-আপনিই বাড়বে বা High হবে।