ওয়েবসাইট এসইও করার ৭টি গোপন উপায়

Spread the love

ওয়েবসাইট এসইও হল ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম পার্ট। কেউ যখন আপনাকে তার ওয়েবসাইটের জন্য নিয়োগ করবে বা ওয়েবসাইটে অনেক বেশি পরিমাণে ট্রাফিক নিয়ে আসার কথা বলবে। তখন আপনি বুঝবেন যে তার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে এবং সেই ওয়েবসাইটে এসইও করার মাধ্যমে ট্রাফিক বাড়াতে হবে। 

এখন আপনাকে এসইও করার ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন সেই ব্যক্তির ওয়েবসাইটে এসইও করা আছে কিনা এবং কোন কোন বিষয় আপডেট করতে হবে। 

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি একটি ওয়েবসাইটে কিভাবে এসইও করতে হয়, সেই বিষয়গুলো দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। একটি ওয়েবসাইটে এসইও করার জন্য কোন বিষয়টা লক্ষ্য রাখবেন এবং কোন বিষয়গুলো আগে করবেন সেই বিষয়গুলো এখানে দেখানোর চেষ্টা করা হবে। 

পরিপূর্ণ এসইও করার ৭টি ধাপ

আমি শুরুতেই ৭টি ধাপ দিয়ে দিচ্ছি। আর পরবর্তীতে এই ধাপগুলো বিস্তারিত নিয়ে সামান্য আলোচনা করার চেষ্টা করবো। 

  • ১. Niche selection (নিশ সিলেকশান)
  • ২. Keyword research (কীওয়ার্ড রিসার্চ) 
  • ৩. ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করা 
  • ৪. Onpage Optimization (অনপেজ অপটিমাইজেশান) 
  • ৫. Technical optimization (টেকনিক্যাল অপটিমাইশান)
  • ৬. Offpage Optimization (অফপেজ অপটিমাইজেশান) 
  • ৭. Keep Repeating (কিপ রিপিটিং)

এখন নিচে আমি এই ধাপগুলোর বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আপনারা এই বিষয়গুলোকে অনুসরণ করেই একটা ওয়েবসাইটে এসইও করতে পারবেন। ওয়েবসাইটে এসইও করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো। 

আপনি এসইও শুরু করার আগে আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে নিজেকে জিজ্ঞাসা করার জন্য এখানে কয়েকটি প্রাথমিক প্রশ্ন রয়েছে৷

  • আমার ওয়েবসাইট কি Google কনসোলে যোগ করা হয়েছে?
  • ভাল-মানের কনটেন্ট পাবলিশ করেছেন কিনা?
  • ওয়েবসাইট রেসপনসিভ কিনা?
  • ওয়েবসাইট কনটেন্ট কি দ্রুত এবং সব ডিভাইসে অ্যাক্সেস করা সহজ?
  • ওয়েবসাইট নিরাপদ কিনা?

১. Niche selection (নিশ সিলেকশান)

Digital Marketing বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে যারা যুক্ত বা যাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা আছে, তাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে Niche বা নিশ

মার্কেটিং এর ভাষায় আপনি যখন শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট নিয়ে, নির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠীর, নির্দিষ্ট একটি চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে ঐ প্রোডাক্টের বানিজ্যিকভাবে প্রোমোশন করবেন তখন সেটাকে বলা হয় Niche Marketing বা নিশ মার্কেটিং।

আর যে প্রোডাক্ট টি নিয়ে বা ঐ নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের বিশেষ যে ধরণটি নিয়ে আপনি কাজ করবেন তাই আপনার নিশ।

চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যেম বিষয়টিকে আরো সহজভাবে দেখি। ধরুণ আপনি বাংলাদেশে সাবানের মার্কেটিং প্রমোশন করবেন। আপনি Data analysis করে দেখলেন ৯৫% মানুষ শিক্ষা নিয়ে জানতে আগ্রহী (ধরি বাকি ৫% আগ্রহী না)।

তো এই ৯৫% মানে ধরে নেই ১৪কোটি মানুষ। এখন এই ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে আবার ৭০% লোক শিক্ষা নিয়ে জানতে আগ্রহী শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবে বলে, ১৫% লোক শিক্ষা নিয়ে জানতে আগ্রহী শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করবে বলে, আর ১০% মানুষ শিক্ষা নিয়ে জানতে আগ্রহী জ্ঞান অর্জন করার জন্য। আর বাকি ৫% লোক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী শৌখিনতার জন্য।

এখন আপনি ঠিক করলেন আপনি ওইসব মানুষদের টার্গেট করবেন যারা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা নিয়ে জানতে আগ্রহী।

তার মানে আপনি ওই ১০% মানুষের কাছেই শুধু মার্কেটিং করবেন। আর এই ১০% ই হলো আপনার Niche target market

আর এই ১০% এর জন্য যদি আপনি একটা প্রোডাক্ট অফার করেন, যেমন লাক্স বিউটি সোপ, তাহলে এই প্রোডাক্টটাই হলো আপনার নিশ বা Niche। আশা করি বিষয় টা বুঝাতে পেরেছি।

২. Keyword research (কীওয়ার্ড রিসার্চ) 

ব্লগিং এর জন্য কীওয়ার্ড হলো এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন গুলো আপনার ব্লগের লেখা আর্টিকেল গুলো বিষয়ে বুঝতে বা জানতে পারে। 

আর্টিকেলের লক্ষ্যবস্তু কীওয়ার্ড এর উপর ভিত্তি করে সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ব্লগে ভিজিটর্স পাঠায়। আমরা যখন গুগলে কোনো সমস্য বা কোনো বিষয়ে জানার জন্য সার্চ করি, তখন আমরা কি লিখি ? 

অবশ্যই কীওয়ার্ড লিখি যেমন: কীওয়ার্ড রিসার্চ মানে কি, কিভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করব, সেরা কীওয়ার্ড রিসার্চ টুল, Keyword Research কি ইত্যাদি বাক্য বা শব্দ লিখে সার্চ করি। মূলত এই ধরনের শব্দ গুলোকে কীওয়ার্ড বলা হয়। এসইও করার জন্য এই কীওয়ার্ড রিসার্চ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

৩. ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করা 

Website এ এসইও করার জন্য আপনাকে শুরুতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে এবং তারপর নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করতে হবে। 

প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে পোস্ট একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাবলিশ করতে হবে। এভাবে আপনি যখন নিয়োমিত আপনার ওয়েবসাইটে কনটেন্ট আপলোড করতে থাকলে, একটা সময় আপনার পোস্টটি গুগলের কাছে চলে যায় এবং পোস্টটিকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের সবার উপরের শারিতেই দেখায়। ফলে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর সংখ্যা বড়তে থাকে। তাই ওয়েব সাইটে এসইও করার জন্য এই বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।  

৪. Onpage Optimization (অনপেজ অপটিমাইজেশান) 

অন পেজ এসইও এর প্রয়োজনীয়তা কি? কেন ব্যবহার করব? এর গুরুত্ব কত কি? আমি বলবো প্রথমত ওয়েবসাইটকে গুগল সার্চ রাঙ্কিং এ প্রথম পেজে আসা, দ্বিতীয়ত ওয়েবসাইট এ অরগানিক ভিজিটর আনা। 

আপনি যদি, সঠিক ভাবে On Page Optimization করতে পারে তাহলে অনেক গুলো সুবিধা হাছিল করতে পারবেন যেমনঃ

* সার্চ ইঞ্জিন Understanding বাড়বে। ট্রাস্টেড কনটেন্ট হিসেবে গুগলের কাছে পরিচিত হবে। যার ফলে গুগল Rank বাড়বে।

* প্রচুর অর্গানিক ভিজিটর এবং ব্যাকলিংক পাবেন।

* গুগল সার্চ রাঙ্কিং এ Top 10 এ আনতে পারবেন আপনার কীওয়ার্ড বা পোস্ট কে।

On Page SEO হল সুপার শপ এর মত এবং Off Page SEO হল ওই সুপার শপ সম্পর্কে মার্কেটিং করা মত। 

মানে, আপনার সুপার শপে যদি, কাস্টমারের চাহিদা মত প্রোডাক্ট না থাকে। তাহলে, ওই কাস্টমার আর কখনো আপনার সুপার শপে নাও আসতে পারে। আপনি যত টাকা খরচ করে মার্কেটিং করেন না কেন। তারা এসে ফিরে যাবে এর ফলে আপনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা হারাবে। ঠিক একই উদাহরণ আপনার ওয়েব পেজ বা ব্লগ সাইট নিয়ে। 

আপনার ব্লগে যদি পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, অন পেজ এসইও করা না থাকে। তাহলে আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ভিজিটর হারাতে হবে। তাই On Page SEO ওয়েবসাইটের জন্য অনেক জরুরী ।

৫. Technical optimization (টেকনিক্যাল অপটিমাইশান)

টেকনিক্যাল অপটিমাইশান হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যা একটি ওয়েবসাইটকে অরগানিক Ranking পাওয়ার জন্য আধুনিক অনুসন্ধান ইঞ্জিনগুলির প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। 

আপনার ওয়েবসাইটে যদি টেকনিক্যাল এসইও রিলেটেড কোন সমস্যা থাকে বা সঠিক না থাকে, তাহলে এটা নিশ্চিত যে আপনি সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে Rank করতে পারবেন না। 

টেকনিক্যাল এসইও গুলোর মধ্যে রয়েছে  ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং ডিজাইন(Website structure & Design), পেজ লোডিং স্পীড (Page Loading speed), মোবাইল ইউজেবিলিটি(Mobile Usability), সাইটম্যাপ(Sitemap) ইত্যাদি।

৬. Offpage Optimization (অফপেজ অপটিমাইজেশান) 

অফ পেইজ এসইও হলো, ওয়েবসাইটের বাইরের যাবতীয় কাজ। আর অনপেইজ এসইও হলো, ওয়েবসাইটের ভিতরের যাবতীয় কাজ। আরো সহজ ভাবে বললে, ধরুন আপনার একটা দোকান আছে। দোকানের ভিতরে সেল্ফ দিলেন, লাইট লাগালেন, গ্লাস ব্যবহার করলেন, রঙ করলেন। 

এইসব কাজ হলো আপনার অনপেজ এসইও। আর আপনার দোকান আছে সেটা প্রচার করার জন্য লিফলেট, মাইক ব্যবহার করলেন, ব্যানার দিলেন, আপনার দোকান আছে সেটা সবাইকে জানালেন। 

এই কাজ গুলা অফপেজ এসইওতে পড়লো। অফ পেইজ এসইও এর অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে যেমন: লিংক বিল্ডিং, ফোরাম পোস্টিং, আর্টিকেল সাবমিশন, সোশ্যাল বুকমার্কিং, রিভিউ সাবমিশন, পিডিএফ, ভিডিও কন্টেন্ট, ইমেজ সাবমিশন, গেস্ট পোস্ট, ইমেইল মার্কেটিং। ওয়েবসাইট এসইও করার জন্য বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. পুনরাবৃত্তি করতে থাকুন

শেষের ধাপটাকে Keep Repeating – পুনরাবৃত্তি ধাপ বলা যেতে পারে। অর্থ্যৎ আপনি উপরের ৬টি ধাপ আপনার নতুন করে করবেন এবং নিয়মিত করবেন। আসলে একটা ওয়েবসাইট সব সময় আপডেট থাকবে গুগল এই বিষয়টাকে অনেক পজেটিভভাবে দেখে। সব সময় কিছু তথ্য আপডেট করার চেষ্টা করবেন এবং উপরের ধাপগুলো পুনরায় আবার করবেন। 

আশা করা যায় উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনার সাইটে ট্রাফিক বাড়বে এবং এসইও টাও অনেক ভালো হবে। আমরা অনেকেই ওয়েবসাইট তৈরি করি কিন্তু সেটাকে কিভাবে এসইও করতে হয় এবং কোন কোন বিষয়গুলোকে অনুসরণ করতে হয় তা জানি না। আশা করবো আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনেক উপকার হবে আপনাদের। 

SEO শুরু করার পর সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্কিং পেতে কত সময় লাগে?

এখন মূল কথা হল সব নিয়ম নেমে যদি এসসিও করা হয়, তাহলে কত সময় লাগতে পারে। এক্সটি কথা মনে রাকাহ দরকার যে, কোন কিছু রাতারাতি বা খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হবেনা। এক্ষেত্রে সময় ও ধৈর্য দুটোই লাগবে।

এসসিও- এর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল সার্চ ইঞ্জিনগুলো ক্রমাগত তাদের অ্যালগরিদম আপডেট করতে থাকে। তাই র‍্যাঙ্কিং ভাল অবস্থায় ধরে রাখতে হলে নিয়মিত ওয়েবসাইট আপডেট রাখতে হবে। অনেকটা নতুন র‌্যাঙ্কিং পাওয়ার মতো বিষয়।

তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভাল কনটেন্ট হলে ও ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করলে সাধারণত নতুন র‍্যাঙ্কিং আসতে ৩-৬ মাস সময় লাগে।

এছাড়া এক্তা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, ওয়ার্ডপ্রেসের সেরা কিছু SEO প্লাগইন রয়েছে,  যেগুলো আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের সার্চ ফলাফল আরও উন্নত হবে।

শেষ কথা হল এসইও এক ধরনের মার্কেটিং আর এই মার্কেটিং এর বিষয়টা একেক রকম হয়ে থাকে। কখনও একটা সাইটে সাময়িক সময়ের জন্য এসইও করার কাজ করতে হতে পারে আবার কখনও নিয়মিত করতে হতে পারে। আর তাই উপরের বিষয়গুলোকে অবশ্যই আপনি ওয়েবসাইটে এসইও করার জন্য লক্ষ্য রাখবেন। 

Leave a Comment